পদ্মার বালু কার পেটে? আড়ালে পিন্টু-টনি, প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

পাবনা প্রতি‌নি‌ধি : প্রায় ১১ কোটি টাকায় সরকারি ভাবে ইজারা নেওয়া বালু মহালকে কেন্দ্র করে পাবনার ঈশ্বরদী সাড়া ঘাট এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। একদিকে বৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম, অন্যদিকে পু‌লি‌শের যোগসা‌জসে গোপ‌নে বালু উৎ‌ত্তলন, চাঁদাবাজি ও সশস্ত্র মহড়ার কারণে নদীপথ এখন আতঙ্কের নাম।
দফায় দফায় উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া৷ গুলি বিনিময় সহ পুলিশ প্রশাসন পক্ষপাতিত্ব করে অস্ত্র দিয়ে মামলা সাজিয়ে আদালতের প্রেরণের অভিযোগ ও রয়েছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ।

মোল্লা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে চলতি অর্থবছরে না‌টোর জেলা প্রশাসক লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর মৌজায় এক বছরের জন‌্য বালু মহাল ইজারা দেয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ শুরু করার প‌রেই এক‌টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইজারা কৃত জায়গার পা‌শেই জোরপুর্বক বালু উৎ‌ত্তলন শুরু ক‌রলে না‌টোর জেলা প্রশাস‌কের নি‌দের্শ ক্রমে লালপু‌রের ইউএনও সেনাবা‌হিনী‌কে সা‌থে নি‌য়ে ভ্রাম‌্যমান আদাল‌তের মাধ‌্যমে উ‌চ্ছেদ ক‌রে ক‌য়েক‌টি ড্রেজারসহ বাল্ক‌হেট আটক ক‌রে নি‌য়ে গে‌লেও থে‌মে নেই তা‌দের কার্যক্রম। স্পিডবোর্ডে করে সশস্ত্র অবস্থায় আসে এসব জলদস‌্যুরা অগ্নিআস্ত্র হাতে ।
গত ৫ জুলাই ২০২৫: পদ্মা নদীর সাড়াঘাট এলাকায় একটি সুসংগঠিত চক্র হাইকোর্টের একটি আদেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ব্যাপক আকারে অবৈধ বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বাধীন এই চক্রের তৎপরতায় হুমকির মুখে পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা হার্ডিজ ব্রিজ, লালন শাহ সেতু।

স্থানীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, জাকারিয়া পিন্টু কারামুক্তির পর তার ভাই মেহেদী হাসান, সাবেক যুবদল নেতা সুলতান আহমেদ টনি বিশ্বাস এবং কুষ্টিয়ার ‘বালি সাঈদ নামে বিশেষ পরিচিত সাঈদ খানকে নিয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছে। যা পরিবেশ আইন ও নদী খননের সরকারি বিধিনিষেধকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করছে ।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ ফাড়ীর ইনচার্জ মো:- ফিরোজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন সুলতান আহমেদ টনি বিশ্বাসের নামে হাইকোর্টের একটি আদেশ রয়েছে সেই আদেশের বলে সারাঘাটে বালু উত্তোলন করছে । সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায় এই আদেশ শুধু নির্দিষ্ট মামলার প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছিল, কখনোই বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়নি। কিন্তু প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা নদী উজাড় করছে এই অবৈধ বালু উত্তোলনের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে পদ্মার তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক হার্ডিজ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতুর ভিত্তির ওপর। তা‌দেরকে পরিবেশবিদ ও প্রকৌশলীরা বার বার সতর্ক করছেন কিন্তু তারা ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু তুলে নেওয়ায় পদ্মা নদীর গভিরে যে স্তর রয়েছে তার স্বাভাবিক গতিপথ বদলে যাচ্ছে।

এর ফলে ব্রিজের পাইলিং দুর্বল হওয়া, এমনকি ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, রাজনৈতিক ছত্রছায়া গত সপ্তাহে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পর ঈশ্বরদী প্রশাসন ক্ষণিকের জন্য অভিযান চালিয়ে উত্তোলন বন্ধ করলেও, ৫ জুলাই সকালেই চক্রটি ফের সক্রিয় হয়।

নদী পাড়ের বসতিরা জানান কেউ প্রতিবাদ করলেই হুমকি-ভীতি প্রদর্শন ও মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। তারা আরো বলেন পদ্মার পাড়ে যে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে এই ভাঙ্গনের ফলে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি তারপর আমাদের ঘরবাড়ি… চোখের সামনে সব ধ্বংস হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবাদ করলেই হামলার ভয়। এমনকি মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে জনগণের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি অবিলম্বে বন্ধ হোক,পদ্মায় অবৈধ বালু উত্তোলন।

অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক মফিজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন পাবনা জেলায় কোনো বালু মহলের ইজারা দেওয়া নেই । সাড়াঘাটে মহামান্য হাইকোর্টে একটি আদেশ রয়েছে । তবে সে আদেশে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই । তিনি আরো বলেন আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি এবং সেটা চলমান থাকবে ।

পদ্মা নদীর সাড়াঘাট এলাকায় চলমান অবৈধ বালু উত্তোলন পরিবেশের জন্য হুমকি, যা সরকারের উচ্চ পর্যায়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, নদী রক্ষা কমিশন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, পদ্মার মত জাতীয় সম্পদকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তাকে রক্ষা করতে পারে ব‌লে ম‌নে ক‌রেন স‌চেতন মহল।

নিউজটি আপনার স্যোসাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *