নিজস্ব প্রতিনিধি : পৈতৃক সম্পত্তি দখল ও চাঁদা দাবির সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় অভিযুক্তরা আরও ক্ষিপ্ত ও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ভুক্তভোগী বিধবা আনোয়ারা বেগম (৬২) এবং তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা তার তিন বোনের ওপর হামলা, মারধর, শ্লীলতাহানি ও লুটপাটের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অভিযুক্তরা আনোয়ারা বেগমকে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করে এবং ১২ লক্ষ টাকা চাঁদা না দিলে তাকে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৬ জুলাই, ২০২৫ তারিখে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামে আনোয়ারা বেগম তার পৈতৃক সম্পত্তিতে লাগানো গাছের পরিচর্যা করতে গেলে অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার পথ রোধ করে। অভিযুক্তদের মধ্যে তোতা মিয়া, মনির মিয়া, নূর ইসলাম, কুদ্দুস মিয়া, আবু তাহের, ইদ্রিস মিয়াসহ প্রায় দশজন ছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। তারা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আনোয়ারা বেগমের কাছে পুনরায় ১২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।
তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্ত তোতা মিয়া ও মনির মিয়া তার গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। আনোয়ারা বেগমের চিৎকার শুনে তাকে বাঁচাতে তার তিন বোন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাদের ওপরও চড়াও হয়। তাদের বেধড়ক মারপিট করার পাশাপাশি এক বোনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি সোনার চেইন এবং অন্যজনের কাছ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি আইফোন ছিনিয়ে নেয়। অভিযোগে আরও বলা হয়, ঘটনাস্থলে তাদের কিল-ঘুষি ও লাঠিপেটা করার পাশাপাশি শ্লীলতাহানিও করা হয়। এলাকাবাসী এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়, তবে যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে বলে, “১২ লক্ষ টাকা চাঁদা না দিলে এই ভিটায় আর আসবি না। আসলে তোকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলব।”
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই বিরোধ এবং নির্যাতন বহুদিনের। আনোয়ারা বেগমের বাবা, মৃত সোনা মিয়া, জীবিত থাকা অবস্থাতেই অভিযুক্তরা তার ওপর বিভিন্ন সময়ে হয়রানি ও নির্যাতন চালাত। অভিযোগ রয়েছে, এই বিরোধের জেরেই সোনা মিয়া ও তার স্ত্রীকে একাধিকবার মারধর করা হয়। সেই মারধরের কারণে সোনা মিয়ার স্ত্রী গুরুতর আহত হন এবং দীর্ঘদিন শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভুগে অবশেষে মৃত্যুবরণ করেন।
এর আগে গত ০৮ জুলাই, ২০২৫ তারিখে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আনোয়ারা বেগমের পৈতৃক সম্পত্তি দখল ও চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই অভিযোগে বলা হয়, আনোয়ারা বেগমের বাবার মৃত্যুর পর অভিযুক্তরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নামে ১২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। এমনকি প্রধান অভিযুক্ত আবু তাহের ২০১৮ সালে একটি অঙ্গীকারনামায় জমিটি তার নয় বলে স্বীকার করলেও ক্ষমতার দাপটে সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে দখল বজায় রাখে।
যদিও প্রথম অভিযোগের পর থানা পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় এবং নতুন করে এই নৃশংস হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারটি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষা এবং নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে তারা এখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।